Search Here

ঘাটের মাঝি

Home / ঘাটের মাঝি

ঘাটের মাঝি ঘাটের মাঝি ঘাটের মাঝি

ঘাটের মাঝি

Spread the love

চতুর্দশপদী কবিতা

লেখকঃ আহসান হাবীব

 

উৎসর্গঃ

আনহার তাসনিম (অনন্যা) আল-আদনান (জিদান)

সহযোগিতায়

মিঃ জেসমিন আরা

শ্রোতী লিখন

মোঃ আরিফুল ইসলাম মোঃ আতিকুর রহমান

সম্পাদনায়

ডাঃ মোঃ লুৎফর রহমান (নিউরোলজিষ্ট) নিউরো অফথালমোলজী

উপহার

মুজিববর্ষ

শুভেচ্ছান্তে

মোঃ আশরাফুল ইসলাম

ধন্যবাদান্তে

এ.কে.এম মমতাজুল করিম (মুক্তিযোদ্ধা)

 

 

সূচিপত্র

ঘাটের মাঝি
মাতৃস্নেহ
লেখাপড়া
সংসারের মায়া
শিশুকাল-
বাংলার রূপ
বাল্যস্মৃতি-
করোনার হিংস্রতা
কৃষক মজুর
গৃহস্তের সরলতা
তুফান
হৃদরোত
শ্রেষ্ঠ জীব
অলসতা
মহত্বের কর্ম
পাখি-
দুখী জীবন
তারকা-
নববর্ষের আনন্দ-
স্বাস্থ্যসেবী
ছেলেটি-
বর্গাচাষী
ধানের আবাদ
পৌষের ধান
কাঠের বাড়ি
মাহে রমজান
প্রবাসী বন্ধু
গ্রাম্য খেলা
মাতৃভাষা বাংলা
মায়ের আদর
মেঘের পানি
কৃষকের দান
ঈদের দিন
আমাজানের মনের দুঃখ
কুয়াশা ও শিশির-
চোখের অসুখ
রোহিঙ্গা
মহান বাংলাদেশ।
শীত ও দুঃখী মানুষ
দুর্নীতিবাজ

স্বপ্ন সুখ
পাগল

 

ঘাটের মাঝি

ঘাটের মাঝি ঘাটে বসে গোমরা হয়ে,
আকাশ পানে চেয়ে ভাবে একান্ত মনে
জনভূমি শূন্য ঘাট আজ-এ কারণে
দুখে তাদের দু’চোখে জল যায় বেয়ে।
পড়ে থাকে হাহাকারে বড় কষ্ট সয়ে
শত আশায় মাঝি গড়ে ঘাটের সনে
গভীর সম্পর্ক; যদি কেহ কোনো ক্ষণে
আসে হেথা তারে পার করি দেয় নায়ে

হেন কালে কোনো পথিক আসলে ঘাটে
আদর যত্নে তারে দ্রুত নৌকায় তোলে,
লগি-বৈঠা বয়ে তবে ব্যতিব্যস্ত টতে
নৌকার প্রতিপারে হাওয়া লেগে পালে।
সামান্য রোজগারে ওরা ঘাটের মাঝি
বিপদের বন্ধু হয়ে ঘাটে থাকে বুঝি।

মাতৃস্নেহ

সুখের দিনে কতজন হাসির তালে
ভাঁপায় হৃদয় অতি করে তোষামোদ,
যখনই অসুখ বা দৈন্য দশা হলে
পলায়ন করে সব দেখে এ বিপদ।
এক সাথে চিরবাস ঢের কত শত
বিপদগ্রস্ত হলে পরে এ দুনিয়ায়,
আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া পড়শি যত
ছলনার অযুহাতে পাশ কেটে যায়।

অসুস্থ হলে মাতা ব্যথা ভরা মননে
শীর্ণ কায়ে ভূখায় দিকবিদিক ছুটে,
ঔষধ পথ্য কতো যোগাড় করে এনে
শিয়রে বসে হায় মাথায় বিলি কাটে।
নামাযে কেদে মাতা ছোঁড়ার তরে কয়
দ্রুত সেরে উঠে যেন ওগো দয়াময়।

লেখাপড়া

অস্ত্র নয়! চাই একটি কলম হাতে
কাগজ পত্রসহ পড়ার মতো বই
এই নিয়ে আমি যেন মস্ত ব্যস্ত হই,
মনের মাধুরি মিশে নিরলস চিত্তে
চাই সর্বাস্তকরণে আমি লিখে যেতে।
লেখা আর পড়া ঢের মনে গাঁথি এই
অসৎ কর্ম ছুঁড়ে ফেরে সৎকর্মই
নিবিড়ভাবে গুছে রাখতে পারি যাতে।

খাতা কলম সাথী হোক মোর জীবনে
নীতিবাক্য লিখি যেন খাতার পাতায়,
সময় কাটুক মোর জ্ঞান আহরণে
প্রত্যহ পুলকে বই পড়ার নেশায়।
লিখি বা পড়ি যাহাই হউক না কেন
সময়ের মূল্য বুঝে তাই করি যেন।

সংসারের মায়া

রৌদ্র উত্তাপে গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে,
হাত-পায়ের বল দেহ মনের জোরে
পুরুষ তার মেলা মাঠের কাজ সেরে
দিন শেষে ভূখা পেটে বাড়ি আসে চলে।
সন্ধ্যা পর কিঞ্চিৎ খাওয়া শেষ হলে
বিছানায় শুয়ে ভাবে সারা রাত ধরে,
ঝড় ঝঞ্ঝাট কত মায়ার সংসারে
এ ভাবেই আরাম তার যায় বিফলে।

হাটে ঘাটে মাঠে পুরুষ গৃহতে নারী
হাঁস মুরগি পশুপালন যথারীতি,
ঘর কন্যা করে সেত ঝেড়ে ঘরবাড়ি
পুরুষের সেবায় আরও মগ্ন ওতি।
সংসারে মায়ার টানে নারী পুরুষে
খুশির বন্যা ছড়ায় শান্তির সুবাসে।

১০

শিশুকাল

প্রভাতে উঠিয়া শিশু দল রাস্তাঘাটে
চলে কত হট্টগোলে ছেড়া জামা গায়ে
কারো হাতে ছেড়া বই নিয়ে খালি পায়ে
পাড়ার সকল শিশু এক সাথে জুটে ।
কোলাহল তামাশায় সদা পায়ে হেঁটে
কতক গল্পে নির্ভর কেহ গান গেয়ে।
হাতে হাত ধরে তারা যায় বিদ্যালয়ে
দলে দলে সারি বেঁধে মুখে হাসি ফুটে।

বিকেল বেলা শিশুরা স্কুল হতে ফিরি
জড়ো হয়ে মিলেমিশে করে ঠেলাঠেলি।
আনন্দ উল্লাসে সব দিয়ে গড়াগড়ি
মাঠ কাঁপিয়ে তোলে নানা রকম খেলি।
আধার ঘনিয়ে আসে যখন সন্ধ্যায়
খেলা ভেঙ্গে শিশু সব বাড়ি চলে যায়।

বাংলার রূপ

হে বাংলা! তুমি মোর কত যে আপন
জন্মি তোমার বুকে জীবন আজ ধন্য,
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ লাবণ্য
চারদিকে শস্য খেত মাঠ ভরা ধান
ফুলে-ফলে ভরপুর গাছের বাগান।
ঝোঁপ-জঙ্গল ভরা জীব জন্তুর বন্য
পাখি সকল উড়ে চলে খাবার জন্য
খিদেয় করে কিচির-মিচির বয়ান।

যেখানেই যাই আমি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
সুখে-দুখে কাজে-কর্মে আহার-নিদ্রায়,
বাংলার অপরূপ হৃদয়ের কোণে
ফুটে ওঠে সেই চিত্র আমাকে কাঁদায়।
দেশে দেশে কত কিছু দেখিয়াছি যত
কোথাও পাইনি রূপ বাংলার মতো।

বাল্যস্মৃতি

বাল্যকাল ছিল মোর কত স্মৃতিময়
পাড়ার দুষ্টু সকলে গলাগলি করি
পাড়ায় অযথা করতাম ঘুরাঘুরি
পড়ার ছলে সতত ভুলি বিদ্যালয়
ভাবিতাম সর্ব সুখ এই বুঝি হয়।
সখাসখি যত সারা দিনমান ধরি
হৈহুল্লোড়ে মাতি সর্ব ক্লেশ পরিহরি,
চলিতাম শিশুকালে এই ভাবে হায় ।

বাল্যকালে বালখিল্যতা মননে গাঁথি
দুষ্টামিতে সদা ব্যস্ত থাকি সোজাসুজি,
লেখাপড়া বাদ দিয়ে মোরা সঙ্গি সাথী
মিষ্টি ফলের লোভে সর্বকানন খুঁজি।
দিনে ঘুরি রাত্রে পড়া করিবার ছলে ।
খেলার ছক আঁকি যে বই খাতা খুলে ।

ছেলেটি

ছেলেটি মোর বেজায় ধূর্ত সাইকেলে
চড়ে ঘোরে রাস্তায়-যতই করি মানা
ঘাঁড় বাঁকিয়ে দ্রুত চলে বাধা মানে না,
স্কুল হতে বাড়ি ফিরে বইখাতা ফেলে
সাইকেল খোঁজে একটু সুযোগ পেলে ।
বিশ্রাম নাই কোনো শুধু যান চালনা
লেখাপড়ায় আলস্য আর যে ছলনা
মাথা নাকি ঘোরে তার পড়িতে বসলে।

কত শান্ত, সুবোধ ভদ্র মোর ছেলেটি
নহে একরোখা সে যখন যাহা পায়,
তাতেই তুষ্ট সদা শুধু সাইকেলটি
অবসর পেলেই তা আনন্দে চালায়।
সাইকেলে চড়ার আশা দিলে বিশেষ
ছেলে তখন পড়ায় ব্যস্ত বেশ বেশ।

১৩

করোনার হিংস্রতা

হে করোনা। এতই ক্ষোভ রেখেছ মনে
হিংস্র থাবায় তব তীক্ষ্ণ ক্ষুর ফলা
বিষাক্ত ছোবলে দেহ করে তোলে জ্বালা,
অতিক্ষুদ্র কায়ালয়ে মানুষের সনে
লড়াই বাঁধ আক্রশে যেন প্রাণ পনে।
মানুষের জান লয়ে ছিনিমিনি খেলা
ছলনে করো ওদের সাঙ্গ সাব লীলা
সর্দি-কাশি জ্বর যদি হয় অকারণে।

কোথায় থাক লুকি তুমি অদৃশ্য হয়ে
নিরাকার দেহ তোমার মুলুক জুড়ে,
কেমনে চলেছো করোনা তোমার ভয়ে
উৎকণ্ঠে আছি মোরা শুধু ঘরে ঘরে।
শত খুঁজেও তব দেখা পাই না ওরে
উঁকি ঝুঁকি মার নাকি সর্দি কাশি জ্বরে।

১৫


কৃষক মজুর

কৃষক মজুর যত সূর্যোদয় কালে
মাঠের কাজে বেরোয় হাত মুখ ধুয়ে
কেহ যায় ভুখা পেটে কেহ কিছু খেয়ে,
বুক ভরা বেদনায় দুই হস্ত মিলে
কর্মযজ্ঞে লিপ্ত হয় একত্রে সকলে।
সারা দিবা খরতাপে ঘর্ম শিক্ত গায়ে
অসহ্য কষ্টে তারা সদা উপুড় হয়ে
জমির সেবা করে চোখের জল ফেলে।

মৌসুম শেষে যথা ভালো ফসল হলে
অতীত গানি সকল ধুয়ে মুছে যেয়ে,
পুলকে মুখর হয়ে পরিবার মিলে
কৃষক চলে সর্বত্র তথা গান গেয়ে।
মাটি চিরে শ্রমে সদা ফসল ফলন
ইহাই কৃষকের শুধু আজন্ম ধ্যান

১৬

বর্গাচাষী

বর্গাচাষী এরা একটু সুখের আশে
পরের জমি আবাদ করে হায় কত
ছেলেমেয়ে সাথে নিয়ে নিজে স্ত্রী সমেত
সর্বক্ষণ খাটে ভূমে মনের উল্লাসে
ফলন যাতে বেশি হয় সেই ভরসে।
“মাঠের মধ্যে শস্য খেত ভালো যে এত
খোদার দয়ায় হয়েছে মনের মতো”
ফসল দেখে সকলে মনে মনে হাসে।

বর্গাচাষী ভাগ্যহত শ্রেণিভুক্ত যারা
এদের দেহে কষ্ট সদায় লেগে থাকে,
গৃহস্তের উঠানে ফসল এনে এরা
পড়ে যায় হায়! মস্ত বড়ই বিপাকে।
গৃহন্ত সাব মিথ্যা দেনার অযুহাতে
কিছু দিয়ে হাতে বিদায় দেয় ত্বরিতে।

১৭

গৃহস্তের সরলতা

জমি সব বর্গা দিয়ে গৃহস্ত নগরে
বাস তার নিশ্চিন্তে ভরসা করে এতে
মৌসুমান্তে ভাগ মিলায় সমানুপাতে
ফসল যা উৎপাদন হবে খামারে।
এ সমস্ত আশা যেন আছে প্রাণভরে
“বর্গি মোর সৎ এমন নাহি জগতে”
এ ভাবনা সদা তার চলাফেরা মতে
পুলকিত হৃদয়ে দুঃখ পরিহারে।

ভালো ফসল হলেও গৃহস্তের কাছে
মনে গেঁথে কূটধি বর্গি কয় শুধুই,
‘রৌদ্র ঝড়ে শস্য সব নষ্ট হয়ে গেছে।
খামারে যে ফসল নাহি কোনো কিছুই
শুনি গৃহন্ত স্মিতহাস্যে চিত্ত উদারে
খরচ বাবদ কিঞ্চিৎ দেয় বর্গিরে।

১৮

তুফান

বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টি তুফান নাম তার,
পূর্ব-পশ্চিম বা উত্তর-দক্ষিণ থেকে
দ্রুত বেগে বায়ু বয়ে ঘোরে এঁকেবেঁকে
ঘর-বাড়ি গাছ-পালা সব ছারখার
করে তোলে বিধস্ত জানমাল সবার।
আবাদি ফসল যা জন্ম জমির বুকে
কৃষক ফলায় কষ্টে অতি ধুঁকে ধুঁকে
নিমেষে তুফান তা করে দেয় সাবাড় ।

হে তুফান এতই শক্তি তোমার গায়ে
কোথা থেকে ছুটে আসি এই দুনিয়ায়
বীর দর্পে তুমি অসীম সাহস লয়ে
পরিণত কর সব ধ্বংস লীলায়।
কোনো কিছুই কখনো তোয়াক্কা না করে।
ভূতলে লুটাও সব দুর্দান্ত সজোরে।

হৃদরোত

হৃদয়ের মাঝে যদি আতংক হয়
ধড়ফড় করে বুক যখন তখন
অকারণে বাড়ে অতি রক্ত সঞ্চালন
এমন সময় মনে ধরে কত ভয়
গা কাপে থরোথরো মাথা ঘোরে বেজায়।
শোয়া-বসা আরামে যথা হৃদস্পন্দন
অস্বস্তিতে ছটফটে যেন বিলক্ষণ
রুগী তখন নিরবে নিভৃতে হাঁপায়।

পরিশ্রম উচ্চবাচ্য চিন্তা অতিশয়
অনিয়মে খাওয়া আর যে ধূমপান
ইহাতে মানব দেহে ধীরে ধীরে হয়
হৃদরোগ সর্বদা ঘটে বৃদ্ধিসাধন।
জীবনযাপন যদি রীতি অনুযায়ী
হয় তবে হৃদরোগ হবে ধরাশায়ী।

শ্রেষ্ঠ জীব

সৃষ্টিকূলের মধ্য শুধু মানুষ হায়!
তীক্ষ্ণভাবে আদর যত্নে শ্রষ্টা মহান
তৈরি করে শ্রেষ্ঠ জীব দিয়ে আখ্যায়ন,
জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক পরিপূর্ণ হৃদয়
মানব চিত্তে তা দিছে খোদা দয়াময়।
সহায়-সম্পত্তি সম্পদ মানসম্মান
অর্থবিত্ত স্বহস্তে এসব করে দান
মানব প্রেমে খোদা হয়ে অতি সদায় ।

কত সুন্দর কায় কারুকার্য গঠন
ভালো-মন্দ বিচারে বুদ্ধিমত্তায় ভরা,
কথাবার্তায় মাহাত্ম ভদ্র আচরণ
ইহার সমন্বয় জীবজগতে সেরা।
শ্রেষ্ঠ যত অবশিষ্ট দুনিয়ায় ভরে
সবই যে মানুষের কল্যাণের তরে।

অলসতা

যুবক তুমি কেন আছো মুখ থুবড়ে
লোহিত রক্তকণা তব কত গরম
তেজস্বী হাড় মাংস যেন ততসম
পেশীশক্তি বড়ই সুঠাম দেহ জুড়ে
তবু যে রহ চেয়ে সদা আলস্য করে।
কি সুন্দর কায়া তব কোমল নরম
তাহা লয়ে ভাবো বোধহয় এরকম
এমনই সুস্বাস্থ্য আর বা আছে কারে?

হে যুবক ! চক্ষু মেলে দেখ চারপাশে
কত কর্ম অযত্নে অবহেলায় আছে,
তনু ঝেড়ে তাকাও দেখবে কর্ম এসে
হাসি মুখে ঘুরছে তোমার পিছে পিছে।
কর্মহীন জীবন সর্বদা হাবভাব
মনে দেয় অশান্তি সংসারে অভাব।

২২

মহত্বের কর্ম

আলসেমি ছুঁড়ে ফেলে সারা দিনমান,
ধর্ম ভীরু অতি যারা নিষ্ঠা সততায়
নিম্নস্বার্থে স্বীয় চিত্তে গতিশীলতায়
স্ব-কর্মে পুরোদস্তুর করে আত্মদান।
স্মরণীয় জগতে সেই মহাপ্রয়াণ
জীবন ভর কর্মটুকু অতিমাত্রায়
স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে স্মৃতির পাতায়
সর্বদা হয়েও তাদের জানাবসান।

সুশিক্ষা তাদের কত চলনে বলনে
সদালাপ আদর্শ নৈতিকতা মহত্ত
এ সকল তাদের মহিমান্বিত গুণে
উদার মনে এনে দেয় বড় কৃতিত্ব।
শির হয়নি কন্তু অন্যায় কর্মে নত
কর্মসাধনে লিপ্ত ছিল ন্যায়সঙ্গত।

পাখি

আকাশে পাখির দল ভেসে ঝাঁকে ঝাঁকে
দল বেঁধে সবে নিত্যকর্মের দোহায়
পাখায় ভর দিয়ে গা ছড়িয়ে বেজায়,
সুনির্মল সম্মীলনে উড়িয়ে পুলকে
নেচে গেয়ে বিচরণ করে সদা হেকে
পোকামাকড় উচ্ছিষ্ট খাদ্য যাহা পায়
ভুক্ত পেটে সকলে তা মিলেমিশে খায়
এভাবে গড়ায় ওরা জীবনধারাকে।

প্রকৃতির প্রাচুর্য এরা বিচিত্র ঢঙ্গে
পরিবেশের রূপ শত বাড়িয়ে তোলে,
উঁচু নিচু নাহি ওদের একই সঙ্গে
সবাই চলে সর্বদা ভেদাভেদ ভুলে।
কত মিল ওদের হৃদয়ের বন্ধন
প্রাতে-সাজে গীতায় এক সুরে সমান।

দুখী জীবন

ভুবনে কত দুখী হীন জীবন বয়
কংকাল সারে মেলা অনাহারে লোক
মাঠে হাটে ঘুরে ফেরে পেটে রাখি ভোক,
এরই মাঝে যদি কারো অসুখ হয়
তুষের অগ্নির ন্যায় অশান্ত হৃদয়,
দুখানলে দহে ঢের করে অতিশোক
অনন্ত ধারায় তা বাড়িয়ে মৃত্যু ঝোঁক,
উদর পুজার লক্ষে ঘুরছে সদায়।

কুঁড়েঘরে চিরদিন দারিদ্র্যের সঙ্গে
রুগ্নকায়ে তাদের সতত চিরবাস,
অনটনের ছাপ হেন আসিয়া তুঙ্গে
অভাগার গৃহে নৃত্য করে পরিহাস।
কষ্ট দুর্দসায় দুখী দারিদ্র্য ও রোগে
সংসার পাড়ি দেয় চরম দুর্ভোগে।

২৫

তাঁরকা

তিমির গগনে চোখিত তাঁরকারাশি
সৌন্দর্যের ঢং-এ রাতে বিরাজ করে
আলোকরশ্মির ছটা তপ্ত গায়ে জুড়ে,
পুরো দস্তুর তটস্ত যেন মিলেমিশি
ভূপৃষ্ঠে কিরণ ছড়ায় আকাশে ভাসি।
আধার বক্ষভেদী তাঁরা খুব ধারে
চিকিমিকি আলোতে ব্যাপক পরিসরে
উজ্জ্বল ধবল বর্ণে ফুটে তোলে হাসি।

প্রস্ফুটিত নির্মল তাঁরকা আভায়
অপরূপ নিখুঁত অলংকার সেজে,
বিমুগ্ধ করে তোলে প্রকৃতির শোভায়
জগতময় নিশি কালো আধার মেজে।
নির্জন নিস্তব্ধ রাত্রি অন্ধকার কালো
নিত্য গর্ব করে সে পেয়ে তারার আলো।

স্বাস্থ্যসেবী

করোনায় স্বাস্থ্যসেবী করি দুগ্ধদান
অবুঝ শিশুগণের দয়ামায়া ছেড়ে
খোদা পাকের ভরসায় আবদ্ধ ঘরে
রাখি সেবিকা ওরে, পরি রক্ষা বর্ষণ
করোনা রুগী সেবায় বেরিয়ে যান।
চোখে-মুখে শোকের ছাপ শূন্য উদরে
জীর্ণশীর্ণ চেহারায় ওরা একাধারে
সেবায় রত সদা ভুলি পতি-সন্তান।

পিতা-মাতা ভাই-বোন পরিবারে কত
খেয়াল নাই তাতে শুধু চিন্তা সদায়,
‘করোনা অসুস্থ যেখানে রুগী যত
সুস্থ করে তোলে যেন শীঘ্র দয়াময়’।
বাড়ি বা হাসপাতাল কিবা অন্যথায়
আনন্দ ধরে তার রুগীর সুস্থতায়।

নববর্ষের আনন্দ

জাতীয় উৎসব হোক মোদের আজি
পহেলা বৈশাখ ভিন্ন মোরা পরবাসী
রয়েছে যারা যত বাংলা ভাষাভাষী,
প্রবাসে থেকেও সেদিন ওরা বাবুজি
আনন্দে মাতোয়ারা ফুটে আঁতোশবাজি।
বাংলার টানে বাংলার ঘরে আসি
গলাগলি করি তবে রহে মিলে মিশি
সার্থক করুক বৈশাখ বাঙালি সাজি।

দেশ হোক বা বিদেশে বাঙালি যেজন
মধু খোঁজে ভিন্ন ভাষায় বাংলা ছাড়া,
এই ভুবনে জন্মি বেঈমান সেজন
তার নেইতো কোনো মান কুল-কিনারা।
ভুবনে জন্মি বাঙালি সেজে সুখে-দুখে
নতুন উদ্যোমে চলি পহেলা বৈশাখে।

ধানের আবাদ

বাংলার চাষি যারা গ্রামে বসবাস
ভোরে লাঙ্গল কাঁধে সাথে হালের গরু,
মাঠে গিয়ে তাতে কষ্টে জমি করে চাষ
এভাবেই ওদের কার্য দিবস শুরু।
নগ্ন গায়ে রুগ্ন কায়ে ক্ষুধার যাতন
সহ্য করে উপুড় হয়ে জমির বুকে,
সারি সারি ধানের চারা করে রোপণ
কৃষক সব দুখের সংসারে থেকে।

দিনভর কাম শেষে রাত্রে এসে বাড়ি
আরাম ভোগে মাত্র নিদ্রায় যতক্ষণ,
কষ্ট বেদনা কত গায়ের ঘাম ঝরি
চাষি ফলায় ধানের বাম্পার ফলন।
আবাদ ভালো হলে পরে তা চোখ মেলে
দেখে কৃষক যায় সব দুঃখ ভুলে।

পৌষের ধান

পৌষ মাসে আসে সকল নতুন ধান
সোনালি রং মেখে সবাই মিলে হেসে
মত মত গন্ধ তার ছুড়ে চারিপাশে
দেখি তাহা গেরস্থের ভরে ওঠে মন।
পুরো মাঠজুড়ে শুধু ধানের প্লাবন
গেরস্থ বেজায় ব্যস্ত ওই পৌষ মাসে
প্রবল রেগে তারা আনন্দময় বেসে
গান গেয়ে ধান গৃহে করে আনয়ন।

মাড়াই শেষে গেরস্থ মাচার গোলায়
সযতনে রেখে ধান খুশির কল্লোলে,
সুস্থ কায়া মনে ওরা শ্রষ্টার কৃপায়
সারাক্ষণ নিশ্চিন্তে সবাই হেসে চলে।
শীতেও কত কষ্ট সয়ে মনের তেজে
সর্বদা নিয়োজিত থাকে যানের কাজে।

কাঠের বাড়ি

কত সৌন্দর্যমণ্ডিত মম কাষ্ঠবাড়ি
তক্তায় বাধানো এটে মজবুত বেড়া
মনোরম দৃশ্যে তাহা জ্বলজ্বল করি
ঘরগুলো তার সব চারপাশে ঘেরা।
জানালা দরজা আসবাবপত্র যত
কাঠের তৈরি উহা মনের অভিলাষে
গুছিয়ে রাখি গৃহ দৃষ্টিনন্দন মতো
যেন হস্তের শৈল্পিক কারুকার্য মিশে।

চৌদিকে কত ঘর কাঠের বাড়ি ঘিরে
কোনোটাতে নিদ্রা কোনোটা বৈঠকখানা,
ভোজনকালে সকলে ফের রান্না ঘরে
কাঠের পিঁড়িতে বসে ভুঁজি খানাপিনা।
দুর্ভেদ্য প্রাচীরবেষ্টিত কাঠের বাড়ি
দেখিয়ে আমার দু’নয়ন যায় জুড়ি।

মাহে রমজান

বারো মাস পর হায় মাহে রমজান
অবসর কেটে আসি মুসলিম বিশ্বে
গাহে ইসলামি গীত সর্ব মাঝে মিশে
জেগে উঠি নিদ্রিত সেসব ধর্মপ্রাণ।
জন্ম নিয়েছে ভূতে যত মুসলমান
নামাজ রোজা হজ্ব ঈমান এই মাসে।
করি পালন, যাকাত বিলি অনায়াশে
যারা গরীব অসহায় দুস্থ যে জন।

মাহে রমজান বারবার এসে চলে
পূর্ণ কর মোর ভাণ্ড পূণ্যি সবে দিয়ে,
ছিল যাহা পাপ তাহা ধুয়ে মুছে ফেলে
দেহত্যাগী হই যেন নিষ্পাপ হৃদয়ে।
শত এবাদত কাল খোদা করি দান
হাজার মাসের সেরা মাহে রমজান।

প্রবাসী বন্ধু

কেমন আছ হেন বন্ধু জানিতে চাই
বন্ধু-বান্ধব সঙ্গী সাথী সকলে ভুলে
পড়িয়াছো প্রবাসে কত বছর হলে
দেখি যাও মোদের দেশে ফিরে সাগাই,
মুখ থুবড়ে রয়ে ভগ্ন হৃদে সবাই
ছোটবেলা কেটেছে নানান খেলা খেলে
হাসি-ঠাট্টা তামাশা গাঁথি মায়ার জালে
এসব আজ অতীত ভুলিও না ভাই।

ভিন দেশে ভিন্ন ভাষা চাওরিয়া আজি
শার্ট প্যান্ট কোর্ট টাই পরিধান করে,
দিবানিশি সর্বদা যেন সাহেব সাজি
আনন্দে উল্লাস চিত্তে চল ঘুরে ফিরে।
যেখানেই থাকো দোস্ত সুখে থাকো তুমি
স্মরণে রাখো সতত তব জন্মভূমি

গ্রাম্য খেলা

গ্রামে আজ ম্লান-যা খেলেছি শখ বসে।
হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট কিংবা লাঠিখেলা
দাঁড়িবান্দা, ঘোষালী আর হলদি ঢেলা
কানামাছি, লুকোচুরি দৌড় আঁক কষে
মোরগ লড়াই ব্যাঙ ঝাঁপ বসে বসে
ছল ছল সাঁতরিয়ে জলে ভেসে ভেলা,
মাছ ধরার ছুঁতোয় কাঁদা ছেনে তোলা
এসব অতীত স্মৃতি শুধু চোখে ভাসে।

গাঁয়ে ছিল মোর কত ফূর্তি কোলাহল
হাসি-কান্না আনন্দ উল্লাস হর্ষধ্বনি,
কেড়ে নিয়েছে সব ক্রিকেট ফুটবল
বাড়িয়ে দিয়েছে মনের আবেগখানি।
নিজে খেলে গর্ব কর খেলা নাহি দেখ
ভোগে নয় ত্যাগে সুখ এটি মনে রেখ।

168

মাতৃভাষা বাংলা

মাতৃভাষা বাংলা সর্ব ভাষার সেরা
বাঙালিরা সবে এই ভাষারই বুলি
শিখে যেন শত ধন্য তাতে রং তুলি
লিখি কেহ সাহিত্য দেয় যে ফেলে সারা।
বুক ফুলে গর্ব পরে বঙ্গে জন্মি যারা
এ ভাষায় লিখে-পড়ে বহুত বাঙালি
অর্জন করি সুনাম আনছে সকলি
সারাবিশ্বে ক্রিয়াকর্মে মাতৃভাষা দ্বারা।

কত লোকের কত ভাষা ভূবনে আছে
ছোট বড় মূৰ্খ জ্ঞাণি অনেকের মতে,
বাংলা ভাষা প্রিয়! সর্বজনের কাছে
বিবিধ সাজ মিশিয়ে হেতা বাংলাতে।
সৌভাগ্যবান হেন মায়ের মুখে শিখে
পড়াশুনা বাংলায় ঋণী ওতে লিখে।

৩৫

মায়ের আদর

জননী গো সর্বদা তোমার সুচি মুখে
মনন চায়ে শুধু দেখিতে মুক্ত হাসি
কথা কহ সদা আদর সোহাগ মিশি
আচলে জড়িয়ে যেন মায়াবিনি চোখে
কাছে টেনে নিয়ে ‘বল খোকা থাকো সুখে”।
রোগে আক্রান্ত হলে পরে শিয়রে বসি
সেবা কর অতি যত্নে সারা দিবানিশি
ডাকো স্ৰষ্টায় সদা ক্রন্দন করে দুখে।

মাগো এই দুনিয়ায় তুমি বড় ধন
তোমার তুল্য নাই কেহ ইহজগতে,
অতীব কষ্টে আমায় করেছ পালন
জানিয়েছ শিক্ষা কর্ম ধরী নিজ হাতে।
শত সালাম মাগো তোমার পদতলে
বেহেস্ত যেন হয় মোর মরণ হলে।

৩৬

স্বপ্ন সুখ

ভিন দেশে ওরা সব যেন মহাসুখে
বাস করে বিভুয়ে ভাবনা নাহি করে
প্রসাদ ভোগে সদা প্রায় উপর ভরে,
সাহেবী পোশাক গায়ে চলে হাসি মুখে
মনে মনে সারাক্ষণ ভাবী অতি দুখে

অভাব অনটনতা মম সংসারে
ক্লেশ কষ্ট মিশে আছে ভিটে মাটিজুড়ে
চৌদিকে ঘন কুয়াশা অশ্ৰু দুই চোখে।

কিছু দিন পর শুইয়া মায়ের কোলে
ঝোক ধরি বিদেশে যাইবার আশায়,
বিক্রি করে সব কিছু সহায়-সম্বলে
ছিল যা গৃহে নগদ টাকা-পয়সায়।
পর দেনা পরিবার জিম্মি মহাজনে
সর্ব সুখ স্বপ্নি পাড়ি দিই এক কনে।

৩৭
পাগল

দিনে হোক রাতে হোক কাঁধে ঝোলে ঢোল
রৌদ্র ঝড় একাকার তবু ঢোল বাজি
গ্রাম শহর মাতায় পাগল বাবুজি,
শিশু সব তার পিছে করে সরগোল
আর দশে চাহি থেকে বাঁধে হট্টগোল
কাউকেও ডরে না সে মেরে ডিগবাজি
ধাক্কা মেরে অট্টহাসে অতি ভদ্র সাজি
কেহ বা পাকিয়ে বসে শক্ত গণ্ডগোল।

কখনো সজ্জন বেশ দেহ ফিটফাট
ভাষার শ্রী মধুর, করি কেশবিন্যাস,
পোশাক আটিয়ে গায়ে যেন বড়লাট
ছিন্ন বস্ত্রে কবু ফকির, কবু সন্ন্যাস।
আবোল-তাবোল বকে লোক কোলাহলে
সংসার ছেড়ে ঘোরে মন্ত সে পাগলে

মেঘের পানি

আকাশে উড়িয়া মেঘ খাল বিলে বলে,
‘ভূমিতে থাক বেশ গর্ত সদৃশ কায়ে
উপরে পানির আশে রহ মুখ চেয়ে,
পেট পূর্ণ আছ সদা পচা গন্ধ জলে
স্বচ্ছ পানি মোর তব উদরে ভরিলে।
ধন্য হবে ইহ জন্ম, মম নাম নিয়ে
জপ কর সতত, সারা জীবন বেয়ে
আনন্দে মাতিয়া উঠ মোর পানি পেলে’।


শুনি কথা খাল বিল কহে মেঘ ভাই,
‘বাতাসে উড়িয়ে তোমার ঝড় তুফানে,
দেহ করে লণ্ড ভণ্ড, তব দেখা নাই
লুকাও যেন আকাশে কোনো এক কোণে।
কখনো তুফান আশিবার আগ থেকে
কান্না জুড়ে লুকিয়ে থাক মোদের বুকে’।

বা

কৃষকের দান

শষ্য ফলায় কৃষক কষ্টে নিজ ভূমে
কেহ বা বর্গা কেহ বা খাসে চিরদিন
কর্মী সাজি তথায় অতি বিরামহীন,
আদর যত্নে মেহনত কায়িক শ্রমে
শষ্যের ভাঙার বোনায় গায়ের ঘামে।
ঝড় বৃষ্টি তুচ্ছ করে চাষি সারাদিন
রৌদ্র তাপে পুড়ে চর্ম হয় বর্ণহীন
যুক্ত থাকে ভুক্ত পেটে সদা কাজ কামে।

ফাল দিয়ে কৃষক জমির বুক চিরে
ফসল জন্মায় সেথা হাড়ভাঙ্গা খেটে,
জীর্ণ-শীর্ণ কায়ে সদায় অসুখ করে
তবু ওদের কভু ঔষধ নাহি জোটে।
কৃষকের কষ্টের দান শষ্য ফসল
যা খেয়ে বাঁচি ধরায় মানব সকল।

ঈদের দিন

বছরে দুই ঈদে বিশ্ব মুসলমানে
হাতে হাত রেখে সবে কাঁধে কাঁধ মিলি
খুশির আনন্দে ভোগে সকল মুসল্লি,
প্রার্থনায় রত হয়ে মানব কল্যাণে
দোয়া মাগে হাত তুলে শিক্ত দু’নয়নে।
নানা যত্নে পরস্পরে করে কোলাকুলি
গৃহে ফেরে তথা হিংসা বিদ্বেষ ভুলি
নাহি কোনো ভেদাভেদ ছোট বড় মানে।

মানবকুল ধরায় ঈদ উৎসবে
জাতিবর্ণ নির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে,
মিলেমিশে একত্রে সুখের বন্যা ভেবে
আমেজে ভ্রাতৃত্ব মননে সাজিয়ে তোলে।
ধর্ম যার উৎসব সবার এ হৃদে
মেতে সবাই পুলকিত পবিত্র ঈদে।

চোখের অসুখ

দিনের বেলা দেখিনু আলোতে আঁধার,
গগনে সূর্য কিরণ গনগনে জ্বলে
তাপ তার সবটুকু মিশায় ভূতলে
তবুও চৌদিকে দেখি ধুধু অন্ধকার।
যখন শুনি চেঁচামিচি ঝিঁঝিঁ পোকার
নিশিবোধে শান্ত মনে বাতায়ন খুলে
একটু হাওয়ার আশায় চক্ষু মেলে,
শুয়ে বসে তিমির কেটে করি সাবাড় ।

দিন কিবা রাত বুঝা বড় মুশকিল
খাওয়া দাওয়া পান শুধু অনুমানে,
পথ চলা কাজ কর্ম করিতে হাসিল
পথ পানে চাহি সদা সঙ্গি অন্বেসনে।
এমনি হেতু কতজনে আসিয়া মুখে
ভালো মন্দ জিগায় অসুস্থ চোখ দেখে।

82

রোহিঙ্গা

জাতি ধর্ম বর্ণ হেতু বাধি মন্ত দাঙ্গা
বেদনা ভরা হৃদয়ে ধন রত্ন ফেলে
পাড়ি জমায় এদেশে, বাঁচতে সকলে
ভিটে মাটি ছাড়িয়ে যত সব রোহিঙ্গা।
পাহাড় কেটে বন সেঁচে ঐ সাঙ্গো পাঙ্গা,
আরাম আয়েসে আছে ঘর বাড়ি ভুলে
পড়ছে ঘুরছে বেশ সদা হেসে খেলে,
পেট পুরে খেয়ে আনছে হেথায় মঙ্গা।

বিশ্ব চাটুর দল বলে নিঃসন্দেহে
‘বাঙ্গালি আজ বড়ই মহৎ উদারে
বুকের মাঝে চেপে পরের বোঝা বহে
সেরে ওদের কত পরম সমাদরে’।
হে বিশ্ব বিবেক দেখ চক্ষু মেলে তাকি
মানবতার শীর্ষে বাংলাদেশ বৈকি।

80

আমাজানের মনের দুঃখ

এই ভুবনে বিধাতা কল্যাণের তরে
কোথাও গাছপালা কোথাও ঘরবাড়ি
ডোবা নালা, খাল-বিল কত সারি সারি
উদর পূরণ করি পাঠাইছে মোরে।

বহু যত্নে গড়িয়া জগৎ‍ সংসারে
বিধাতার কত খেলা কত বাহাদুরি
সৃজন করিয়া মোরে অতি তরি ঘড়ি,
প্রাণ খুলে জান সর্বদা চালন করে।

আমি আমাজান কত কষ্টে দুনিয়ায়
পড়ে আছি খরতাপে বা আগুনে পুড়ে,
দেহখানি যদি কভু ছাই হয়ে যায়।
দেখিবে না কেউ, রবে মোর থেকে দূরে।
হে মানব সন্তান সবাই মিলে আজ
রক্ষা করে মোরে পরাও রঙিন সাজ।

৮৮

কুয়াশা ও শিশির

কুয়াশা কয় শিশিরে, ওগো জাতি ভাই,
দিনে রাতে সর্বক্ষণে সাদা রূপ ধরে
কায়া মোর গলিয়ে যায় ভূমিতে ঝোড়ে
এ দেহ দেখে তবে চিনে মোরে সবাই

কেমন তুমি? তোমার কোনো রং নাই।
তিমিরে যখন শুধু তরু পত্র নড়ে
টিনের চালে পড়ো বৃষ্টির মতো করে
তখন বুঝি তোমায় ও শিশির সাই।

শিশির হাসিয়ে কহে জাননা গো তুমি
আকাশ ভরা তারকা স্বচ্ছ ধরা কত,
প্রকৃতির শ্যামল যা সব ভিজে আমি
দেখাই ভরে তাহা ধৌত করার মতো।
তোমার বিশ্রী গায়ের রঙ্গে সাদা ভেসে
বেড়াও দুনিয়াজুড়ে পোড় ধোয়া বেসে।

মহান বাংলাদেশ

তুমি আজ ধন্য মহান বাংলাদেশ
কত সুনাম ছড়ায়ে বিশ্ব দরবারে
বুক ফুলে আছো সদা অতি গর্ব করে,
কোটি সন্তান তুমি জন্ম দিয়ে বিশেষ
সুখের বাহনে মশগুল আজ বেশ।
দালান-কোঠায় তোমার সন্তান ওরে
শুয়ে থেকে তাতে ওরা সুখে ঘুম পাড়ে
ভুলে অতীত মননে লাগি নববেশ।

হে বাংলা ! কত দেশকে পিছনে ফেলে
উন্নয়ন হেতু অতীব আঘ বাড়িয়ে,
চলেছ উল্কার মত শক্ত মন বলে
উন্নত হতে অচিরেই সব ছাড়িয়ে।
ওহে! রূপসী আজ তুমি এক অনন্য
ধনে মানে জ্ঞানে হয়েছ আজ বরেণ্য।

৪৬

শীত ও দুঃখী মানুষ

গরিব দুখী মানুষ কন কনে শীতে
হিমেল হাওয়ায় সুস্থ শরীরখানি
শিউরে উঠে ক্ষণে ক্ষণে দেয় কাঁপনি,
ছিন্ন বস্ত্র একটু গায়ে জড়ায় এতে
উষ্ণতার আশে তারা থাকে ওঁৎ পেতে।
যদি কেহ কভু কিঞ্চিৎ পোশাকখানি
নিশিকালে তারে নিয়ে করে টানাটানি
আরামে শুয়ে ওরা সুখে ঘুমায় যাতে।

শীতকালে দুখীজন পরিবার নিয়ে
অনাহারে অতি কষ্টে ক্ষুধার জ্বালায়,
মলিন মুখে সদা দিন মজুর হয়ে
কাজের সন্ধানে চলে পাড়ায় পাড়ায়।
শ্রম শেষে চাল ডাল শীত বস্ত্র কিনে
বাড়ি এসে হাসিমুখ দেখে পরিজনে।

৮৯

দুর্নীতিবাজ

স্নেহ মায়ায় জড়ি জীবন সংসারে
ন্যায় অন্যায় কিবা সত্য মিথ্যার ধারা
বোঝিনিত কভু আরাম আয়েস ছাড়া,
ভালো মন্দ পাশ কেটে এ জনম ধরে
অর্থের পিছু ছোটে বিস্তর পরিসরে।
দুর্নীতি দুষ্কর্ম শত দেহ মনে ভরা
তা দিয়ে গড়ে তুলে বড্ড ধনের বেড়া
বিত্তের গর্বে ওদের খ্যাতি দেশজুড়ে।

অসহায় নর-নারী রুগ্ন কায়া বেসে
হাড়ভাঙ্গা খেটে দুখের কবলে পড়ে,
দিনের পর দিন দেশকে ভালোবেসে।
অর্থ জোগান দেয় গায়ের ঘাম ঝরে
শ্রমের ফসল তারা ভোগ করে আজ
রুক উঁচি দাপায় যারা দুর্নীতিবাজ।

সমাপ্ত

Leave A Comment