Search Here

Padda Setur Atto Kotha

Habib Book > Padda Setur Atto Kotha

Spread the love

১   রাখাল ও তার কর্ম

দুই পাশে শস্য ক্ষেত মধ্যেখানে আল

আগাছা রূপবতী অহরহ সেথায়

সতেজ তৃণলতা মুক্ত বায়ে জন্মায়,

সেথা গৃহস্থের লইয়া গরুর পাল

মনের আনন্দেতে গান গেয়ে রাখাল।

সকালে বিকালে গরু বাছুর চড়ায়

উদর প্রতি হলে গরু লয়ে সন্ধ্যায়

বাড়ি ফিরে রাখাল পূর্ণ  করে গোয়াল।

দিনের বেলায় খাবার যোগার,রাতে

গোয়াল ঘর পরিষ্কার করিতে হয়,

মশারি টাঙ্গায় গরুর উপর যাতে

মশার কামড় থেকে গরু রক্ষা পায়।

এভাবেই প্রত্যহ সেরে কর্মসমস্ত

নিদ্রা যায় রাখাল আরাম করি মস্ত।

২ তেঁতুল পত্র

ছোট ছোট পত্র গুচ্ছ অতিব পাতলা

লাখো কোটি অসংখ্য বড্ড গজিয়েছে

ঘন ডালের ডগায়,ঐ তেঁতুল গাছে

অপরুপ শোভায় নিদারুণ নির্মলা

দেখিতে সুন্দর বেশ ক্ষুদ্র পাত্র গুলা।

মাঝে মাঝে মৃদুবায় পাতা সব মিছে

“তালে তালে নেচে নেচে হাওয়ায় গেছে”

এই ভেবে পাতার মন করে উতলা।

ডালপালা মজবুত পত্র ক্ষুদ্রাকারে

তারে লয়ে অতি যত্নে করি আচ্ছাদন,

তেঁতুল পাতার ঝোপে প্রগাঢ় আঁধারে

পাখি দ্বয়গড়ে তোলে সুশ্রী আবাসন।

তেঁতুল পাতা ছোট গুন যে এত বড়

নিশ্চিন্তে থাকে পাখি হইয়া জড়োসড়ো।

৩  বই

হে বই!তুমি বিশেষ জ্ঞানের ভান্ডার

অবজ্ঞায় পড়ে থাক কতই না জানি

বোবা সদৃশ যেন জ্ঞানের শিরোমণি,

অগনিত বিদ্যা ধারা উদরে তোমার

কৃষ্ণ বর্নে ছাপা আছে -পড়ি বারবার।

হয়েছি তোমায় পড়ে ভূবনে সম্মানি

যেখানেই থাক তাই দ্রুত খুঁজে আনি

থলেতে পুরি তোমায় শুধু পড়ি বার।

মনে মনে আজ করিনু শপথ পুথি-

যদি কভু দেখি তুমি আছো অব হেলে,

“অন্য কর্ম সরে যাক”-এই মনে গাথি

দেখা মাত্র তোমায় রাখব তাকে তুলি।

বইয়ের সঙ্গে মিতালি করে যে অতি

দেশ ও দশে হয় সে বড় বিদ্যাপতি।

৪      মোর মেয়েটি

কত শান্ত সুব্রত মোর মেয়েটি ওরে

হৃদয় তার বড়ই পাতলা অল্পতে

দু-নয়নে আসে জল তাই কোনোমতে,

মুখ চেপে রুদ্ধ শ্বাসে দ্রুত এক দৌড়ে

পলায়ন করে গিয়ে থাকে বন্ধ ঘরে।

সহজ সরল স্বাভাবে আনন্দ পেতে

খেলাধুলার জন্য বান্ধবী খুঁজে নিতে

হরদম ছুটে চলে লেখাপড়া ছেড়ে।

চঞ্চলা নয়তো সে জিদ একটু বেশি

কোন কিছুতেই তার তর নাহি সয়,

হাতে পাওয়া মাত্র তা হয়ে বেশ খুশি

লেখাপড়ায় বিশেষ মনোযোগী হয়।

পোশাক পরিধানে এতই পরিপাটি

দেখিলে মনে হয় কত ভদ্র মেয়েটি।

৫ চল্লিশ বছর বয়স

চল্লিশ বছর বয়সে কি আর লিখি?

শতশত চিন্তা ভাবনা ভাসি অন্তরে

অনিদ্রায় কেটে রাত যায় মাথা ঘুরে,

যৌবন পেরিয়ে যে পৌঢ়ের মুখোমুখি

দারিয়ে আমি আজ কতনা কিছু দেখি।

হাসি কান্না হামাগুড়ি শিশু কাল মোরে

কিশোর কেটেছে মোর হাটাহাটি দৌড়ে,

এসব হৃদয়ে আজ করে মাখামাখি।

শুধু ভাবি অহর্নিশি হাত দিয়ে গালে

আর কিবা হবে মোর এ বাকি বয়সে,

শরীর খানি নিস্তেজ ক্ষীণ মনোবলে

কল্পনায় উরে যাই হাওয়ায় ভেসে।

জীবন গড়ার যোগ্য সময় যৌবনে

সেই সফল আজ যে বুঝেছে সে ক্ষনে।

৬     চৈত্র মাসের জল

মেঘের গর্জন তথা চৈত্র মাস ব্যাপি

গুড়গুড় আওয়াজ যখন এমনে

বীর-দর্পে ভুলে যায় এই শব্দ শুনে,

গর্তে যা মৎস্য-ব্যাঙ আছে ঠাসি চুপি

হেন কালে গর্ত থেকে করে দাপাদাপি।

বের হয়ে ডোবা নালে সব এক সনে

জলের জন্য হুতাশে তারা ঐক্যতানে

“জলদে জলদে” করে সদা যায় জপি।

খানিক পরে বৃষ্টি হলে ডোবা নালায়

মনের খায়েশে জলজীব হেসে চলে,

ব্যাঙ ডাকে গলাফুলে মাছেরা দাপায়

অবশিষ্ট জলকিট তুরি মারে খেলে।

চৈত্র মাসে জলজীব নবজল পেয়ে

আনন্দ উল্লাসে তারা ছুটে যায় ধেয়ে।

৭                             পথিক      

কত পথ বায় পথিক নিশ্চুপ মনে

বিরামহীন নিরানন্দে শুষ্ক কায়ায়

রাস্তার এক পাশে চলে নিচু মাথায়,

পদতলে উত্তাপ খরো রৌদ্র গগনে

তবুওতো পথিক যায় যে কোনখানে?

জানিনা তো কোনকিছু বুঝা বড় দায়

হয়তোবা স্বীয় আত্বা বিরহ ব্যাথায়

চলেছে নিরবে সে তার গন্তব্য স্থানে।

কোথা হতে আগমন তব বল তাই

কোন ছলে বিবাগী হয়ে তুমি অযথা,

আত্বীয় স্বজন ভুলি ছাড়ি নিজ ঠাই

মনের ব্যাক্ত অভিলাষে যাও অন্যথা।

জন্ম নিবাস ছেড়ে যে হয় গৃহত্যাগী

সে হয় ভবঘুরে নয় মস্ত বৈরাগী।

৮                     মুসাফির

কে গো তুমি হেন দরবেশ না ফকির?

মাথায় কিস্তি টুপি গায়ে ধুসর জামা

মুখে লম্বা দাড়ি হাতে তসবিহ খানা,

তা লয়ে খনে খনে করতেছ জিকির

নানা ভঙ্গিতে গজল গাহি একটানা

সুরের লহরে বেশ মুখে তুলি ফ্যানা

আগা গোড়া জীবে প্রেম করিছ জাহির।

হেতা হতে সেথা সদা করিয়া গমন

সত্য নিষ্ট বাক্যালাপ চালাও বিশেষ,

“মানব প্রেমই বড়” শুধিয়ে এমন

মন  রঞ্জনে সর্বদা ব্যাস্ত হও বেশ।

ধার্মিক সেজেও সদা চলি লোকালয়ে

“ধর্মের চেয়ে কর্ম বড়” যাও তা কয়ে।

৯          হাটুরে

হে ঘাটাল ভায়া আর কত হবে দেরি?

বেলা বয়ে যায় সময় বেবাক নাই

গঞ্জে যেতে হবে বাজার করিতে ভাই,

কখন যে ছাড়িবে তোমার এই তরি

ওপাড়েতে লহ মোরে অতি তাড়াতাড়ি।

আধার ঘনীলে আমি বড় ভয় পাই

আতংকিত হৃদয়ে যেন মরে যাই

সেহেতু বাজার কার্য দিবালোকে সারি।

ওপাড় জনশূন্য  চারিদিকে  নিরব

দিনেতে যদিও থাকে রাত্রি কালে ফাঁকা,

ওপাড় জনভিরে উচ্ছাস কলরব

সবাই সেথা নিশ্চিন্তে ঘোরে একা একা।

দিবালোকে বাজার সেরে রাতের ভয়

চতুর জন যত তা হর্ষে করে জয়।

১০                           চোর

মিষ্টি মিষ্টি  মধুময় কত কথা শুনি

আনন্দে তোষামোদ করে চোর সকল

মৃদুস্বরে বলে কথা সহজ সরল,

ধার্মিক তারা সাধুজন কতনা জানি

পরধনে নাহি লোভে সুধায় এমনি।

সৎকর্ম সৎবাক্য সত্য মনবল

এগুলোতে হয় নাকি জীবন সফল

এরুপ সোনায় নানা ধর্মের কাহিনী।

দিবা ক্ষনে সৎজন আঁধার আসিলে

চোর ডাকু বেসে মুক্ত চলে ঝংকারে,

চুরি করে ওরা আবার সুযোগ পেলে

সর্বস্ব নেয় কেড়ে ওরা গায়ের জোরে।

কাজকর্ম চলাফেরা আলোতে যখন

করে জ্বালা তারাই ভালো ভাবে এমন।

১১                          পদ্মার ইলিশ

পদ্মা ভরা শত শত রুপালি ইলিশ

মাছের রাজা হয়ে সদা প্রবল স্রোতে

গা ভাসিয়ে চলে সেতা অতি আনন্দেতে,

কত শান্তি প্রিয় নিবাস তাদের ইস্! 

লোনা জলে শাতরিয়ে বেরায় ভাগ্যিস।

ঝাঁকে ঝাঁকে আগাগোড়া ভেসে ফুলকাতে

বিরামহীন সর্বদা আপন শক্তিতে

উজান ভাঁটি  বহে সানন্দে হিসাহিস।

আবদ্ধ জল তেঁতো শ্যাওলা আবর্জনা

পচা বাসি দুর্গন্ধতা চির বন্দি শালা,

তাইতো খুঁজে নিয়ে সুস্বাদু জল লোনা

ভাসি তাতে হওযে উৎফুল্লে উতল।

লোনাজল বৃষ্টি তব মিঠা পানি তেতো

তাই থাক তুমি তোমার সুবিধা মত।

১২                       পোষা কুকুর

দখিন দুয়ার খুলে দেখি আঙিনায়

গৃহের পোষা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে

চির অভ্যাস মতে লেজটা নেড়ে চেড়ে,

ঊষাকালে প্রভু ভক্ত পোষ্যটা আমায়

ছলছল নেত্রে কি যেন বলতে চায়।

দেখিলাম, পোষ্য পানে উঠানের পরে

শুষ্ক ক্ষীণ কায়াধারী হিংস্রোতা ছেড়ে

ভুক্ত যঠর বেশ দেখায় ইশারায়।

ঘর হইতে বাহির হইবা মাত্র সে

প্রনাম জানায় কত নুয়ে পদতলে,

মনে হলো, সারা রাত জাগরণ শেষে

তুষ্ট হয় সেতো প্রভুর সান্নিধ্য পেলে।

প্রফুল্ল মনে আমি কোনো খাবার এনে

পোষা কুকুরটায় খেতে দেই তখনে।

১৩                 শীত

হায় শীত!  হেতা আর কত দ্বীন রবে?

অনেক দিন তো হলো দুনিয়ার বুকে

ভিনগ্রহ থেকে তুমি আসিয়াছ জেঁকে,

গাছপালা মানুষ সর্বপ্রকার জীবে

আঁকড়ে ধরেছ তা উচ্ছাস কলরবে।

যদিও হিমেল বায়ু সর্ব পরিসরে

এদিক থেকে সেদিক চলে যায় উড়ে

আর তাতে বেগ তব বৃদ্ধি পায় তবে।

ওগো শীত ভায়া আর করিওনা দেরি

সহেনা শরীরে মোর তব জ্বালাতন,

যেথা থেকে এসেছ সেথায় তারাতাড়ি

যেয়ে আমায় দাওগো চিরো পরিত্রাণ।

জীবজন জন্মিয়াছে সারা দুনিয়ায়

হিন পরশে তব সকলে কুকরায়।

১৪         রাতের পাখি

এত রাতে কে রে তুই ওই বাঁশ ঝাড়ে

পুলকিত হৃদয়ে সুখে থাকি বাসায়

মধুর সুরে গলা ছেড়ে সে গানগায়,

নির্জন নিশিতে দিল মোর মন জুড়ে

আহ কি সুন্দর সুর পাখির গলায়।

আকাশে বাতাসে তা চতুর্দিকে ছরায়

শুনে তাই মনে মোর কত স্বস্থি ধরে।

কান পেতে পাখি টার গান শুনে ভাই

ছটফট করি আমি বিছানায় শুয়ে,

মনে হয় যেন দ্রুতবেগে এখনই

শান্ত করি হৃদয়ে পাখির কাছে যেয়ে।

কভুও শুনিনি এমন পাখির গান

শুনে আজ জুরালো মোর দেহ পরাণ।

              ১৫ জোনাকি

তিমির আঁধারে জোনাকি নব উদ্যমে

স্বাধীন চেতনায় মুক্তর গগনতলে

ঘুরে বেড়ায় উড়ে গায়ে আগুন জ্বেলে,

কি অদ্ভুত কায়া তার কারু কার্য চর্মে

আগুনের দুত্যি ছাড়ে নিশি যবে নামে।

পশ্চাতে আলোর বেগ সামনেতে চলে

আধারের ঘানি কাটে সে আলোর বলে

দিবা বেলা বেগ তার অতিশয় কমে।

জীব জগতে যত কীট পতঙ্গ আছে

পরম যত্নে খোদার সৃষ্টি যতগুলো,

জোনাকির দেহে শুধু দয়াময় দিছে

কৌতূহল বসে তার নিজ দেহে আলো।

সে আলো গর্ব তার তাই রাত্রি বেলা

দেহে আগুন জ্বালি সে করে খেলা।

১৬ পদ্মা নদীর বক

ক্লান্ত চিত্তে সেদিন ছুটির অবসরে

পদ ব্রজে গেনু একা পড়ন্ত বেলায়

সূর্য যেন ডুবু ডুবু ওই দেখা যায়,

এই সময় আসি পদ্মা নদীর পাড়ে

দেখি চাহি অহরহ বক রহে চড়ে।

কারো ঠোটে মাছ কেহ আছে অপেক্ষায়

হাঁটুরে জলে মৎস্য ধৃতের আসায়

কেহ আবার মাছ লয়ে বাসায় ফেড়ে।

উপড়ে চেয়ে দেখি শুন্য আকাশ পানে

সাঝের আগমনে নিবিড় অন্ধকার,

ঝাঁকে ঝাঁকে বলাকা এই বিশেষ ক্ষনে

আকাশে উড়ে চলে বাসায় ফিরিবার।

বকের মিলনে আমি অভিভূত হই

সন্ধার প্রাক্কালে পাড়ে তাই যেয়ে রই ।

১৭  পদ্মার জাহাজ ও তরী

যখনই আনন্দে যাই পদ্মার পাড়ে

গিয়ে দেখি ছোট বড় পাল তুলে তরী

পদ্মার জলে ভাসে বাতাসে ভর করি,

যত ছোট আরো কত পদ্মার কিনারে

বাধা আছে সারি সারি যাইতেও পারে।

মালবাহী জাহাজ সারা দিবা সর্বরি

এ পাড় থেকে ও পাড়ে যায় ভুরি ভুরি

বিরাম নাই তাদের জলের উপরে।

ও পাড় থেকে আসে আবার মাল নিয়ে

এ পাড়ের কিনারে ওই জাহাজগুলি,

যাত্রীবাহী জাহাজ যত যাত্রী বাগিয়ে

এপাড় – ওপাড় চলে যাত্রী সব তুলি।

“জলের সেতু” করে যাত্রী মাল বোঝাই

তরী জাহাজ চলে পদ্মায় ক্লান্তি নাই।

১৮ কেমনে যাব

কেমনে যাব আমি পদ্মার ওই পাড়ে

সেই ভাবনায় ঊম্মাদ হয়ে একাই

পদ্মার কিনার ঘেষে ঘুরিয়ে বেড়াই,

মাঝে মাঝে কখনো বসে ভাবি হায়রে

কেমনে যাব আমি পদ্মার ওই পাড়ে।

প্রমত্তা পদ্মার স্রোত বহে যদি যাই

উত্তাল উর্মির দোলা দেবে না রেহাই

এই চিন্তন মনে মোর জেগে উঠে রে।

এপাড় হতে ওপাড় কত নাহি জানি

সূদুর সম্মুখে দেখি শুধু জলরাশি,

মেঘমুক্ত গগনে সুর্যের ঝলকানি

পদ্মার জলে পড়ে তা করে হাসাহাসি।

বিচিত্র দৃশ্য দেখে ভাবি সদা এপাড়ে

কি ঊপায়ে যাব আমি পদ্মার ওপাড়ে।

১৯  পদ্মা পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছা

আকাশ দিয়ে বেবাক পাখি যায় উড়ি

পদ্মা পাড়ে থেকে আমি ভাবি দেখে স্রোত

ইশ! যদি কভু এমনটা  মোর হত,

ইচ্ছা মতো তবে দু’ডানায় ভর করি

অনায়াসে পলকে পদ্মা দিতাম পাড়ি।

জল তলে মাছ দেখে ভাবিতাম কত

ওরকম পাখনা যদি দেহে গজাত

পার হতাম পদ্মা নিমিষেই সাঁতরি।

বুক ভরা ব্যাথা নিয়ে বসি পদ্মা পাড়ে

গভীর জল দেখিয়া ভাবি দিবা নিশি

কে দেবে একটি সেতু পদ্মার উপরে

কোন সে মহৎ বা কোন সে মহীয়সী।

যাহার চেষ্টাতেই হোক সেতু পদ্মায়

সর্বদা যেন লভে শান্তি তার আত্মায়।

২০   স্বপ্নতে পদ্মা সেতু

স্বপনে দেখিনু সেদিন ঘুমের ঘোরে

কে একজন আসি আচমকা আমায়

সাথে নিয়ে সে যেন উধাও হয়ে যায়,

কিছুক্ষন পর দেখি আমি পদ্মা পাড়ে

ঘুড়ে চলেছি একা মনের অভিসারে।

হেনকালে সুশ্রী একটি সেতু পদ্মায়

জলের উপর দেখি দাঁড়িয়ে সেথায়

দু’পাড়ের বন্ধন সৃজন পরিবারে।

পরদিন সকালে ঘুমের ঘোর কেটে

জেগে উঠে দেখি আমি বিছানায় পড়ে,

স্বপ্নের সৃতিটুকু শুধু মানসপটে

জলন্ত পানির ন্যায় বুদ বুদ করে।

মনে মনে ভেবে কহিলাম অতিশয়

শীঘ্র যেন পদ্মায় একটি সেতু হয়।

২১ পদ্মা সেতুর আত্নকথা

কহিল পদ্মা সেতু “শোন ওহে বাঙ্গালী

দেখে যাও আমায় কাছে এসে সবাই

দৃশ্যমান স্পষ্ট আজ পদ্মায় যে তাই,

গাড়ি ঘোরা সতত যানবাহন গুলি

বুকের উপর মোর উঠে যায় চলি

লোকজন কত মোর বদৌলতে ভাই

অদ্ভুত মজার কথা আরো শোন বলি।

আমি ছিনু কোথায় কোন সুদূর স্থানে

কেহই জানেনা তাহা শুধু নেত্রী জানে,

সব বিপত্তি ফেলে বাংলার সামনে

জননেত্রী বাংলায় মোরে টেনে আনে।

মজবুত দেহে হেতা যতদিন রব

ততদিন বাংলার সেবা করে যাব”।

২২ পদ্মা সেতুর আত্নকথা ২

“কত সুন্দর দেহ মোর যেওনা ভুলি

শক্ত কাঠামো এত এমনই ধরন

দীর্ঘ বেশ প্রস্থটাও দেখার মতন,

দেশি-বিদেশী যন্ত্র ইট পাথড় বালি

তা দিয়ে করেছে মোরে বাঘা প্রকৌশলী।

যতই বোঝা চাপুক তবুও ভাঙ্গন

ধরিবে না এ মজবুদ দেহে, কারন

মোর দেহে নাই কোন ছেড়া জোড়া তালি।

কত বিশাল সেতু কত নদীর বুকে

মোর মত ধরায় নিতান্তই বিরল,

অহরহ যান মুহুর্মুহু চলে হেকে

কেহ সইবে না এমন চাপ ধকল।

পাকা পোক্ত কায়া মোর যেন আছে ভাসি”

এই বলে পদ্মা সেতু হয় বেশ খুশি।

২৩  পোশাকের বাহার

ঊষা লগ্নেই দ্রুত বিছানা ছেড়ে আজ

হাত মুখ ধুয়ে বেশ প্রাত স্নান সারি

মজ্জাঠাটে বসে আমি পেট তুলি ভরি,

সুশ্রী বেশ ভুষা কত পরিপাটি সাজ

নকশায় শীল্পগাথা তীক্ষ্ণ কারু কাজ।

এসব জড়ায়ে গায়ে হেথা সেথা ঘুরি

মাঝে মাঝে হাওয়ায় মন যায় উড়ি

“আহ কি আজ মোর ফুরফুরে মেজাজ”।

আনন্দ ঊল্লাসে আমি চলি সারাদিন

পেটে নাই কোন ক্ষুধা গায়ে বেশ জোর,

সন্ধার প্রাক্কালে বাড়ি ফিরিবা কালীন

ধীরে ধীরে শরীর নিস্তেজ হয় মোর।

জাগিল মনে মোর কত সাধের মায়া।

২৪  মরুভূমির দেশ।

হেঁটে হেঁটে চলেছি মরুভুমির দেশে

সুনির্মল আবহাওয়ার অন্বেষণে

একাকী ঘুরেছি হেথা নিস্তব্ধ নির্জনে,

“নিঃসঙ্গে চলার সাধ” এই প্রয়াসে

একা তাই ছুটেছি মরুভুমির দেশে।

আমি পরিশ্রান্ত পথি পথে মুক্তমনে

আনন্দ যে পাই কত স্বাধীন চলনে

তাহা আমি বুঝিলাম এ যাত্রায় এসে।

নির্মল হাওয়া বালুকার ঝিকিমিকি

স্বচ্ছ জল কোথাও পাখির কলরবে,

মাঝে মাঝে তরু-তার ছায়া তলে থাকি

মনের কষ্ট সব ভুলে যাই নিরবে।

নির্জন এলাকা ঊহা যার পর নাই

একা একা ঘুরে বড়ই আনন্দ পাই।

25  ছুটির অবসরে

আলস্য ত্যাগ করে ছুটির অবসরে

পিতা মাতার কাজে সহয়তা নয়তো

লেখাপড়ায় তখন থাকি অতিব্যস্ত,

কোনো গুরু যদি শুধু একবার মোরে

ডাক দেয় কভু যে কোন কাজের তরে,

সে সময় নিজেকে সৌভাগ্য মনে কতো

এমন তরো অবলিলায় মনে হতো্‌,

আর তাতেই মনে আনন্দ বেশ ধরে।

ছুটির অবসর নাহি করি ক্ষেপণ

কভু বোঝাই কাউকে দিয়ে পরামর্শ,

“অন্যায়-কুকর্ম মিথ্যা অসদাচরণ

ছুড়ে ফেলে হৃদয়ে নাও নীতি আদর্শ”।

ছুটির অবসর সদা হৃদয়ে গুছি

হেলায় যেন ব্যায় না করি মিছামিছি।

২৬       বাংলাদেশ

হে বাংলাদেশ তুমি যে রূপসী এত

তুলনা নাই কোন সারা মুল্লুক জুড়ে

শুধু দেখিলে তোমায় মন যায় ভরে,

শ্যামল প্রকৃতির তরু পল্লব যত

মাঠ ভরা ফসলে হরেক রঙ তত।

নদী নালা খালে বিলে মৎস্য পুকুরে

পাখি দ্বয় আকাশে পুলকে যায় উড়ে

রাস্তাঘাটে যানযট ছোটে শতশত। 

এরুপ বাংলার চিত্র নয়নে দেখে

মন চায়না কখনো ভিন দেশে যেতে,

বাংলার জলবায়ু খেয়ে হাসি মুখে

যুগযুগ কেটে দেই অতি আনন্দেতে।

বাংলাদেশ ছেড়ে যদি কোথাও যাই

দেখি আমি এর মতো আর দেশ নাই।

27       সঙ্গীতানুষ্ঠান

গেলাম কাল মাঠে গীত শ্রবণ তায়

গ্রামের আজে বাজে সকল ছেলে গুলি

মঞ্চের চারিপাশে করছে ঠেলাঠেলি,

গভীর তিমির বেয়ে থাকি অপেক্ষায়

দুষ্টু শ্রোতা বর্গ ধৈর্য চ্যুত হওয়ায়,

কিছুদুর সরে হস্তে পাটকেল তুলি

মঞ্চের উপর দেয় সরাসরি ফেলি,

যাতে সঙ্গীতানুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায়।

আয়োজক বৃন্দ কম্পিত গায়ে তখন

মুখে কুলুপ আঁটে অতি খোভের সঙ্গে,

আবেগ আপ্লুত মন করিয়ে দমন

গৃহে ফেরে নিশ্চুপ সঙ্গীতমঞ্চ ভেঙ্গে।

ইচ্ছা থাকা সত্তেও শুনতে পেলুম না

সেই সুমধুর সাধের গান বাজনা।

২৮     পাড়ের ভাঙ্গন

ওপাড় ভাঙ্গনে এপাড় সুধায় ভাই

“তব দেহ মনে হয় বালু রাশিরাশি

দোঁ-আশ এঁটেল মাটি অল্প কিছু মিশি,

কর্দমাক্ত দেহ তাতে শক্তি বেশি নাই

স্রোতহীন জলওতো দেয়না রেহাই।

প্রবল স্রোত যখন নিয়ে যায় ভাসি

সেই শরম মুখ কোথায় যে লুকাই”।

এপাড় কহে ওপাড়ে “মোরা সমো জাতি

তবে কেন তুমি গর্ব কর বুকফুলে,

ভরা বর্ষায় মোদের চরম দুর্গতি

দেখে সবাই হাসে ডুবি যখন জলে।

তোমার দেহে যা আমার দেহেও তাই

স্রষ্টা করেছে সৃষ্টি কোনো পার্থক্য নাই”।

২৯      মিথ্যার জোর

মিথ্যার অন্তরালে সতত সত্য বানী

চাপায় থেকে শুধু নয়ন বুঝে হেসে

ভ্যাবাচেকা হয় বেশ মিথ্যার আভাসে,

মিথ্যার সংমিশ্রণে মিশি গুলতানি

শোনায় যে এতই তার কল্পকাহিনী।

চিরন্তন সত্য যা চাপেরয় চুপসে

এতই দুর্বল তার দেহ মন খানি।

এক সময় যখন সত্য দেয় সাড়া

মিথ্যা চাটুকারি তার অসয্য জ্বালায়,

মিথ্যার সম্মুখে সত্য হয় আরো চড়া

মিথ্যা তখন অতিশয় শরম পায়।

মিথ্যাকে সঙ্গি করে ভূতে চলে যে জন

সে জনের ভয়ানক চলন কথন।

৩০   কিশোর বয়স

আজ মনে পরে সেই কিশোর সময়

যখন বন্ধু বান্ধব এক সাথে জুটি

আনন্দে সকলে করতাম ছোটাছুটি,

বাদলার দিনে মাঠে কাদা যদি হয়

খেলার ছুতোয় মোরা তা মাখিয়ে গায়,

পিছলে পরি স্বেচ্ছায় হয়ে গুটিসুটি

শক্তমতে বাধি নিজে কমরের গাট্টি

জোরাজোরি করতাম খেলার পাল্লায়।

লেখাপড়ায় যে আলসেমি অতিশয়

ক্লাস দিতাম ফাঁকি সাধে নানা কৌশলে,

ভাবিতাম মনে কত “জয়-পরাজয়

কার যে হবে আজ উভয় পক্ষ খেলে”

ছুটির দিনে ঘুরি ফিরি সারাটা বেলা

মনের আনন্দে চলি খেলি কত খেলা।

৩১   দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

আজ মোর মোন ভালো পদ্মা সেতু দেখে

শত কথা শুনেছি এই সেতুর তরে

বলেছে অনেকেই ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করে,

টাকা নাকি সিধঁ কেটে নিছে লাখে লাখে

দুর্নীতির দুর্গন্ধ সেতুর গায়ে মেখে।

আগাগোড়া সেতুর কাজ খেলায় সেরে

হিংসুকদের মিথ্যা অভিযোগ রুখে।

স্বপ্নের সেতু আজ অপরুপ শোভায়

দাড়িয়ে বেশ পদ্মায় মাথা উঁচু করে,

সুনিপুণ গঠন তার সুশ্রী কায়ায়

আর কখনো এমন আছে বিশ্ব জুরে।

যখনই মনে দু:খ বেদনা পাই

পদ্মা সেতু দেখতে তখনে ছুটে যাই।

৩২   ক্ষুধার্ত পদ্মা

পদ্মা কেড়ে নিলো মোর মস্ত ভিটে মাটি

সুখের সংসার সাজানো ঘরবাড়ি

অর্থবিত্ত ধন রত্ন কত রকমারী,

সহায় সম্বল ছিল যত খুটি নাটি

প্রমত্তা স্রোত নিয়ে গেল সর্বস্ব লুটি।

ব্যথিত চিত্তে তাই বসত ভিটা ছাড়ি

শুষ্ক বদনে সর্বদা করি ঘোরাঘুরি

সিক্ত চোখে ক্ষুধার্ত পেটে হাত পা গুটি।

আবেগের তন্দ্রা চোখে শোক বাধি বুকে

ভাগ্যের চক্রে ঘুরি নদীর তীর ঘেঁষে,

চেয়ে দেখি অথৈ জল মস্ত ঘুর পাকে

চলে যায় বেগে সুদুর ভাটির দেশে।

আমায় তো না চিনে ঝামেলা ভাবে কত

তাইতো স্রোত মোরে করল পরাহত।

৩৩    প্রতিজ্ঞা

কি পেয়েছি কি পাইনি সেটা বড় নয়

কি খেয়েছি কি খাইনি তাও দূরে থাক

কি করেছি কোন কালে এও সরে যাক,

দিবানিশি ভালো ভাবে মনের ইচ্ছায়

চলি যেন সারাক্ষণ ভাবি অতিশয়।

মনে পুষে সততা ভাবাদর্শ বেবাক

সতকর্মে নিষ্ঠাবান নাহি রাখ ডাক

থাকি সজাগ সদা ভুল যাতে না হয়।

অন্যায়ের আচ্ছাদন ছুড়ে ফেলে আজি

ন্যায়ের ছক আঁকি মোর সুপ্ত মননে,

অবিচার কুকর্ম সকল ধান্দা বাজি

পরিহার করে সততা রাখি স্বরনে।

হোক মোর প্রতিজ্ঞা অন্যায় চেপে নহে

চলি যেন সতত শত আপদশয়ে।

৩৪ পদ্মাসেতুর  বিরোধীতাকারী

কতিপয় সজ্জন পদ্মা সেতুর কাজে

বাধা দিতে তাতে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে

অবিরত কুট চালে লাগে উঠে পরে,

ত্রুটি নাই এতে কোনো তবু ক্ষুত খুঁজে

দেশ বিদেশ বেয়ে চলে অক্লান্ত তেজে।

স্থীতধী ওরা শুধুই বসে শান্ত ধীরে

পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করার তরে

কুবুদ্ধি পাকায় যে হাটুতে মাথা গুঁজে

ওনারা নাকি আজ দেশে স্বনামধন্য

বিবিধ উন্নয়নে তাদের চোখ জ্বলে,

হিংসায় ফেঁপে বিবেক করি বিপন্য

দেশের স্বার্থ দিতে চায় উপরে ফেলে।

দেশে বসে যাহারা দেশের স্বার্থ ভোলে

আসুন বোঝাই তাদের সকলে মিলে।

৩৫      আশা

আশা মোর কত পদ্মার উপর দিয়ে

যাব একদিন অন্যথা মনে সতত

পুষে রাখি এই আশা আমি ক্রমাগত,

দিনের পর দিন চলি এই ভাবিয়ে

যাব তো একদিন পদ্মা নদী পেরিয়ে।

কবে যে হবে সেতু কোন সময় মত

সেও চিন্তা মনে মোর জেগে উঠে কত

তবুও ঘুরে চলি সেতুর আশা নিয়ে।

পদ্মায় যেদিন সেতু হবে দৃশ্যমান

সেদিন উল্লাস মোর আর দেখিবে কে,

নিদ্রা অবস্থাতেও সকল চক্রযান

বহন করিবে মোরে চোখের পলকে।

পদ্মা সেতুর মুগ্ধ দৃশ্য দেখিয়ে চোখে

ঘুরবো হেথা সেথা রইবো মহা সুখে।

৩৬    হামাগুড়ি 

হামাগুড়ি দিয়ে যখন চলা শিখেছি

কোনকিছু নিতে বেশ ঘুরপাক খেয়ে

কান্নায় মত্ত ছিলাম আঁখিজল নিয়ে,

ইঙ্গিতে খনে খনে হাত পেতে চেয়েছি

হাঁটি হাঁটি পা করে তার পর চলেছি।

ধীরে ধীরে হাঁটতে পিছলে পরে গিয়ে

মাটিতে শত বার দিব্য আঘাত পেয়ে

দাদা দাদীর হাতে আজ বড় হয়েছি।

জীবন সংসারে যখন কোনো কাজে

হাত দিয়েছি যতবার তা সমাধায়,

হইনি সফল বরং উদ্দীপ্ত তেজে

চেষ্টায়  রত হই আপন মহিমায়।

কোনো কাজ সমাধান করিতে প্রথম

ব্যার্থ হলেও তাতে নাই লাজ শরম।

৩৭  শান্তির খোঁজে

বাড়ী হতে হনু বাহির শান্তির খোঁজে

স্ত্রী সন্তান যত সবাইকে আজ দেশে

গেলাম রেখে তাদের আমি ছদ্মবেশে,

ভবের নেশায় গেনু চোখ মুখ বুজে

নিশ্চুপ দূরে কোথাও ভবঘুরে বেশে।

গ্রাম ছেড়ে গ্রাম শহরের মধ্যে এসে

দেখিনু কতজন সেথায় শুয়ে বসে

পথের দুই কিনারে অলি গলি সেজে।

শহর থেকে শহর দূর দুরান্তর

শান্তি নাই কোথাও গিয়েছি যত খানে,

আনত মুখে তাই সারা মুল্লুক ঘুরে

বাড়ীতে এলাম ফিরে ভারাক্রান্ত মনে।

শান্তি পাইনি কোথাও ঘরে ঢুকে দেখি

শান্তির গন্ধে হেথা করছে মাখামাখি।

৩৮     সৎ সমাজপতি

সৎ পথে চলে যে সমাজ পতিগন

সেই আজ সমাজের করে উপকার

শতগুণে গুনীমানি সমাজে সবার,

প্রিয় পাত্র হয়ে সদা রহে আজীবন

বিকশিত বিদ্বেষ হীন প্রফুল্লমন।

বিপদে আপদে কারো করে হাহাকার

কুসংস্কার সমাজে করিতে সবার

নির্ভীক চিত্তে তার শতত সচেতন।

অপরাধী দালাল দুর্নীতি পরায়ন

যে যেথায় আছে সব খুঁজি তন্নতন্ন,

সমাজ পতি তাদের করে বিতাড়ন

সমাজকে রাখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

সমাজ থেকে দূর হয়ে ভেজাল কালো

প্রতিষ্ঠিত হোক সেথায় সত্যের আলো।

৩৯   ছোট মাছ

বিহান বেলায় বলাকা নদীর চরে

হাটুজলে নামিয়ে মাছের অন্বেষণে

মৎস্য শিকারী বেসে অতিসত্বর পনে,

মৃদু প্রবাহমান স্রোতে তীক্ষ্ণ নজরে

অপলকে থাকে এক পায়ে ভর করে।

বোকা সদৃশ  চুনো মাছ আসে যখনে

ক্ষুধার্ত  অপেক্ষামান বকের সামনে

ধূর্ত বলাকা তখন খায় তারে ধরে।

ঊষাকালে ছোটমাছ নদী ভরা জ্বলে

ভোরের আনন্দে তারা কিলবিল করে,

বড় মাছের বাস গহীন জল তলে

সে ভয়ে ছোটমাছ চাপে নদীর চরে।

অথৈ জ্বলে বড় মাছ চরে থেকে বক

ছোটমাছ পেলে তারা খায় বেধরক

৪০  রৌদ্র ও জল

রৌদ্র কহে “শান্ত স্বরে ওগো জল বাহে

উঠান মাঠ সব ফসল ভরা জমি

চেয়ে দেখ চুপসে তলিয়ে দিয়ে তুমি,

মোর তাপে ও সব কিছু শুকিয়ে গিয়ে

আনন্দে মেতে ওঠে নব যৌবন পেয়ে।

নদ নদী খাল বিল যত জলাভূমি

থই থই জল ওদের শুষিলে আমি

প্রণাম জানায় শত মোর দিকে চেয়ে”।

জল জিগায় রৌদ্রে “আমি কে জানো কি তা?

সবাই কাদে মোর তরে তৃষ্ণার্ত হলে,

আকাশে উড়ায় যে মেঘ সে মোর মাথা

তার দয়ায় তব তাপ পৌঁছে ভুতলে।

ভাসে যখনই জননী মোর আকাশে

গর্ব তোমার খুন্ন হয় এক নিমিষে।

৪১  করোনা ভাইরাস

হায় করোনা তুমি কেমন ভাইরাস

কোথা থেকে আসি আজ করেছ সাবার

ছোট বড় কেহই নাহি বাদ বিচার,

চুপিচুপি দেহে ঢুকে করে থাকো বাস

সময় মতো দেখাও জ্বর সর্দি কাঁশ।

হাঁচি কাঁশি কিবা করমর্দনে সবার

ভিন্নরুপে অন্যে করি বংশ বিস্তার

কাউকে কর অসুস্থ কারো জান নাশ।

হে করোনা তুমি এতো নিষ্ঠুর পাষাণে

মায়াহীন হৃদয়ে আসি প্রলয় ঝড়ে,

হানিছ আঘাত হেন এই ত্রিভূবনে

মানব কূল যেন বিনাশ করিবারে।

দোহাই তোমার যাও অতি দ্রুত ছেড়ে

তব নাম শুনে সব আতংকে মরে।

৪২  নব উৎসব

এসো বৈশাখ তুমি বাংলার দুয়ারে

নতুন রুপসী যেন সাজ সজ্জা করি

সোনা রুপায় বাধা অলংকার পরি,

কপালে তীলক হাত পা রং বাহারে

নব রুপে বধু বেশে আসিয়াছে ঘরে।

হেথা যেথা যথা তথা চলে ঘরে ফিরি

অপেক্ষায় থাকে সে মনন করি ভারি

হাসি ফুটে উঠে তার বারো মাস পরে।

হৃদয়ের কোনে আছে কতো উৎসব

পহেলা বৈশাখ আজ বাঙ্গালীর মন,

জয় করে নিয়েছে পিছনে ফেলে সব

বাঙ্গালীর হাসি ঠাট্টা ফুর্তি আয়োজন।

পৃথিবীতে আছে যত মানবের শখ

বাঙালীর হৃদে গাথি পহেলা বৈশাখ।

৪৩   প্রভাতের আলো ও প্রকৃতি

প্রভাতে সূর্য কিরণ দুনিয়ার বুকে

আলোর ছটায় হেথা তাপ বিকিরণ

উষ্ণতায় তাজা হয় প্রকৃতির দান,

বিচিত্র রঙের মেলা যেন চিকচিকে

ঝিলিক ছড়ায় সে বিস্তার চারদিকে।

নিশিকালে নিস্তেজ সকল সৃষ্ট প্রাণ

সকাল বেলায় এরা সূর্য করি ম্লান

উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আলো তাপ সুখে

দিনের শেষে সূর্যের তেজ কমে গেলে

ধীরে ধীরে তাপ তার ছুটে চলে যায়,

আলোক রশ্মির ছটা তা গ্রাসের ফলে

আঁধার আসি জগতে উঁকি ঝুঁকি দেয়।

প্রকৃতিতে বিরাজমান সব তিমিরে

হাঁকে খোদায় শুধু উঁষা আলোর তরে।

৪৪  পল্লী নিবাস

কতো সুন্দর শোভা পল্লী নিবাস মোর

দেখেছি দু চোখে হায় দেহ মন ভরে

গুল্মলতা পেঁচি উঠে বৃক্ষ পত্র ধরে,

গাছের ছায়ায় ঘনবাড়ি ঘর দোর

হিম হাওয়া বহে সারা জনম ভর।

ফুলের গন্ধে চিরদিন উঠান জুড়ে

কীট পতঙ্গ  সদা হেতায় ভীর করে

জমায় যেন অদ্ভুত খেলার আসর।

বাড়ির পাশে পাখি গাছের ডালে ডালে

কিচির মিচির শব্দে মাতি অহরহ,

দিবায় আনন্দে উড়ে দুই ডানা মেলে

রাত্রে ঘুমায় নীড়ে যেন নিথর দেহ।

ভোরবেলা পাখি সব জেগে ভূক্ত পেটে

আসিত আঙ্গিনায় খাদ্যের খোঁজে ছুটে।

৪৫  লজ্জাবতী

বৃক্ষ নও তুমি তবু ক্ষুদ্র কায়ে অতি

বন জঙ্গলে জন্মি তিল সদৃশ গায়ে

শতত থাকো ক্ষিন ডাটে কাটা লাগিয়ে,

শতগুণ গর্ব কর ওহে গুনবতী

চুপ মেরে চাহি থাক উচু করে ছাতি।

যদি কেহ কভু দেয় তোমায় গা ছুয়ে

লাজ শরমে ভূতে জিরোও মাথা নুয়ে

খুন্ন মনে অপমানে তুমি লজ্জাবতি।

রোগে শোকে তোমার আদর যত্ন মেলা

শিকড় পত্র আর কন্টক যুক্ত ডাটা,

সঞ্চয় করি বৈদ্য গড়ে ঔষধ সালা

সেবা নেয় রুগি এতে অসূখ যতটা।

কত যে জন রুগি মুক্ত তোমায় চিনে

চির সুখী সেজন দুখ অসুখ বিনে।

৪৬  আমাজান

কত বড় দেহ তব কত বড় জান

তোমা বুকে জমিয়েছে শত গাছপালা

পশুপক্ষী বাধে বাসা লোকে গৃহ সালা,

ফুল-ফল-কাঠ গ্যাস সব করি দান

নিঃস্বাত্বে বিশ্বে বাঁচাও সবার প্রাণ।

মাথায় চাপিয়ে কষ্টে রৌদ্রতাপ জালা

নিচেতে ছিটিয়ে বিলাও ছায়া শীতলা

এ সবই শুধু খোদার মেহেরবান।

সবুজ শ্যামল রুপ ধরে পৃথিবীতে

জন্মিয়েছে অতি গায়ে যেন দয়াবান,

পশুপাখি মানবকূল আনন্দে মাতে

সুখে থাকো এক সাথে তুমি আমাজান।

শত শত বছর ব্যাপি নির্বাক মনে

সেবিছ বিশ্বকে সর্বদা মঙ্গল এনে।

৪৭   গ্রাম্যকোণে

সহজ সরল অপরুপা গ্রাম্যকোণে

হাতে চুরি গলায় মালা আলতা পায়ে

হাস্য রসে ভরামূখ শোভা সারা গায়ে,

আঁচলে ঢাকিয়ে মাথা পতি ঘর মেনে

জ্বলজ্বল করে তোলে নিজ হস্তগুনে।

দিবানিশি সংসারে গৃহ কর্তী হয়ে

ঘর কন্যায় সদাই ব্যস্ত হর্স লয়ে

সর্গের সূখ খোঁজে স্বামীর গৃহখানে।

এইভাবে কিছুদিন পার হয়ে গেলে

ধীরে ধীরে দুখের বোঝা তার মাথায়,

চাপি দেয় পাষাণ হৃদে নানান ছলে

বাড়িতে রয়ে যারা সবাই নির্দিধায়।

ছলে বলে কৌশলে সর্ব কাজের ফাঁকে

দাসির মত খাটিয়ে তবু গালি হাকে।

৪৮   আষাঢ়ে মেঘ ও বৃষ্টি

আষাঢ় আকাশে মেঘ নবরুপ পেয়ে

সাদা বা কৃষ্ণবর্ণ কভু ধারণ করে

খন্ডে খন্ডে নয়তো জমাট বেধে উড়ে,

বায়ূর সাথে মিশে সারা গগণ বেয়ে

নব উদ্যোমে যেন বজ্র চমক দিয়ে।

হেলে-দুলে সর্বক্ষণ গুরগুর সুরে

হাঁকে ডাকে মশগুল বাদলার তরে

হেথা থেকে সেথা যায় দ্রুতবেগে ধেয়ে।

আষাঢ় শেষে মেঘের যৌবন যে হায়

নদী নালা খাল বিল অথৈ জলে ভরে,

আকাশ হতে অন্য কোথা মিলিয়ে যায়

প্রকৃতির রং সব পরিস্কার করে।

তর্জন গর্জন ও বৃষ্টির সমাহার

সৌন্দর্যের অঙ্গ ভেসে গড়ব ধরার।

৪৯   অলস যুবক

যুবক যারা যৌবনে চলে হেলেদুলে

অলসতা ধীরময় লেখাপড়া ছেড়ে

চলনে-বলনে তারা আস্ত ভবঘুরে,

নির্বত সদৃশ চিত্তে ঔদাসিন্যে ছলে

কেটে পড়ে অন্যত্র অতীব সু-কৌশলে।

দিবানিশি সদা তারা ঘোরে মাথা নেড়ে

আলস্যের জড়তায় খানাপিনা ভুলে।

অলসেরা সংসারে জীবন সায়াহ্নে

অসুস্থ কায়ায় কভু চলতে পারেনা,

হেন ক্ষণে ভূত পূর্ব  আলস্যর জন্যে

ওড়া জুড়ে দেয় অঝোর নয়নে কান্না।

জীবন দূখের হয় সর্ব পরিশেষে

বিদ্যা কর্ম যদি কেহ ছাড়ে অনায়াসে।

৫০  ভবঘুরে

চেনা আলোয় পথবেয়ে খাঁটি অন্তরে

উদাসীন মননে অতি মহত বটে

ভদ্র বা সাধক বেসে যথা তথা ছোটে,

দামি সাজ পরি বহু দুর দুরান্তরে

হৃদয়ে হর্ষে বাহ পাখির মতো উড়ে।

চলন ক্ষনে ভোখে যখন যাহা জোটে

তাহাই ভক্ষণে তার দিবানিশি কাটে

নিশ্চিত সে একজন মস্ত ভবঘুরে।

ধনে জনে মালামালে গৃহপূর্ণ তার

গোলা ভরা ধান এবং গোয়ালে গরু,

সিন্ধুক টা তো ভর্তি টাকা গহনা আর

এভাবেই সবখানে গল্প করে শুরু।

ভবঘুরে চলে কিন্তু সদা ভাব ধরে

সারাজীবন কাটে ওদের কুড়ে ঘরে।

৫১   মশার কামড়

ক্ষুদ্র গায়ে জন্ম নিয়ে পঁচা বাসি জলে

ডানা মেলে সদা উড়ে ভোঁ ভোঁ শব্দ করে

চোখের পলকে যেন শব্দহীন স্বরে,

সুযোগ বুঝে শরীরে সূল ফুটে দিলে

ছটফটে যন্ত্রনায় রক্ত চুষে নিলে।

নিশি লগ্নে সর্বক্ষণে দিনে ঝোপে ঝাড়ে

বাস তার নির্ভয়ে সন্ধ্যে নয়তো ভোরে

ক্ষুধার জালায় মশা রক্ত শুকে চলে

চিকনগুনিয়া ডেঙ্গু কিবা ম্যালেরিয়া

লুকে থাকে মশার মুখে এর থাবায়,

অতি দ্রুত বেগে মরণব্যাধি হইয়া

এক হাতে অন্যের দেহে ছড়িয়ে যায়।

মশার কামড়েও হয় যে কতো মৃত্যু

দুনিয়ায় ইহাও এক নির্মম সত্য।

৫২  চুক্তি

হে বিশ্ব বিবেক আজ এসে বাংলায়

দেখে যাও মোরা কত মনে নিয়ে ভক্তি

পার্বত্য সিট মহল এরকম চুক্তি,

করেছি এমন মনের উদারতায়

করেনি তো আর কেহ এই দুনিয়ায়।

মোদের নিকট থেকে পেয়েছিল মুক্তি

বিশ্বজুড়ে ভরা শত সুধায় এ উক্তি

বাঙালীরা অতিমহৎ দয়া মায়ায়।

রোহিঙ্গাসহ এ বাংলায় নানা জাতি

আরামে মাথা গুজে দিনাতি পাত করে,

নাই তাদের বেদনা কোনো ক্ষয়ক্ষতি

সুখ তাদের প্রত্যেহ থাকে ঘর ভরে।

বাংলায় মিলে মিশে মোরা ভাই ভাই

একসাথে আছি কোনো ভেদাভেদ নাই।

সংশোধিত…